For those who hove no preparation for bcs preli By Shushanta Paul । Tips for BCS Preli by Shushanto Paul


৩৭ প্রিলির প্রিপারেশন নিচ্ছেন? তাহলে দেখে নিন ৩০ তম বিসিএস এ প্রথম হওয়া শুশান্ত পলের টিপস।



আমার পেপারটেপার পড়ার অভ্যেস নেই। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করার আগে বিনোদন পাতা আর সাহিত্য পাতা ছাড়া পেপারের আর কোনো অংশ তেমন একটা পড়তাম না। বাসায় পেপার রাখত ২টা। এর একটাও আমি পড়তাম না। বিসিএস’য়ের প্রস্তুতির জন্য নিতান্ত বাধ্য হয়ে অনলাইনে প্রতিদিন ৫-৬টা পেপার পড়তে শুরু করি এবং চাকরিটা পেয়ে যাওয়ার পর আবারও পেপারপড়া ছেড়ে দিই। দেশের এবং বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে, রাজনীতির হাওয়া কোনদিকে, ব্যবসাবাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি, এসব ব্যাপার নিয়ে আমার কোনকালেই কোন মাথাব্যথা ছিল না, আমি এর কিছুই জানতাম না, বুঝতাম না, এবং এ নিয়ে আমার কোন দুঃখবোধও ছিল না। আমার নীতি হল, আমার যা দরকার নেই কিংবা ভাল লাগে না, তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। সবকিছু জানতেই হবে কেন? পৃথিবীর সবকিছু জেনেটেনে ‘সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা।’
বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। দেখলাম, প্রিলি আর রিটেনের জন্য হাতে সময় আছে মাত্র ৪-৫ মাস। (সময় পেয়েছিলাম এরও কম।) প্রস্তুতি শুরু করার পর আমার প্রথম অনুভূতিঃ সবাই সবকিছু পারে, আমি কিছুই পারি না। অনেকেই দেখলাম বিসিএস নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স-পিএইচডি শেষ করে এখন পোস্টডক্টরেটে আছে। কোচিংয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর ক্লাসে এক স্যার আমাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম কী? (পরে জেনেছি, কথাটা হবে, বিদেশমন্ত্রী) যে ছেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম জানে বলে খুশিতে বাকবাকুম করতে করতে একধরণের আত্মশ্লাঘাবোধ করে, তার পক্ষে এটা জানার কথা না এবং এ না-জানা নিয়ে তার মধ্যে কোন অপরাধবোধ কাজ করার প্রশ্নই আসে না! পারলাম না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি হাহাহিহি শুরু হয়ে গেছে। তখন বুঝলাম, ‘এটা একটা সহজ প্রশ্ন ছিল।’ স্যার বললেন, “দেখি, এটা কেউ বলতে পারবেন?” সবাই হাত তুলল, উত্তরও দিল। সবাই-ই পারে! বুঝলাম, এই মুহূর্তে আমার চেহারাটা একটু লজ্জা-পাওয়া লজ্জা-পাওয়া টাইপ করে ফেলা উচিত। আমার বেহায়া চেহারাটাকে লাজুক লাজুকটাইপ করার চেষ্টা করছি, এমনসময় স্যার বললেন, “আপনার সম্পর্কে তো অনেক প্রশংসা শুনেছি। আপনি নাকি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ভাল স্টুডেন্ট। এটা পারেন না কেন? আপনার এজ কত?” ভাবলাম, কাহিনী কী? উনি কি আমার ঘটকালি করবেন নাকি? কিন্তু আমার মত বেকার ছেলেকে কে মেয়ে দেবে? (আমি আসলে বেকার ছিলাম না, নিজের কোচিং সেন্টার ছিল অন্যান্য ব্যবসাও ছিল; প্রচুর টাকাপয়সা ইনকাম করতাম। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষিত ছেলেরা চাকরি না করলে সবাই ভাবে, বেকার।) এসব ভাবতে ভাবতে আমার এজটা বললাম। রিপ্লাই শুনলাম, “ও আচ্ছা! আপনার তো এখনো এজ আছে। অন্তত ৩-৪ বার বিসিএস দিতে পারবেন। চেষ্টা করে যান। প্রথমবারে হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই, ২-৩ বার চেষ্টা করলে হলেও হতে পারে। আপনার বেসিক দুর্বল।” স্যারকে কিছুই বললাম না। কিন্তু মেজাজ খুব খারাপ হল। উনার প্রতি সমস্ত আস্থা আর সম্মানবোধ চলে গিয়েছিল। উনাকে আমার মনে হয়েছিল একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ। যে মানুষ আমাকে না চিনেই প্রথম দেখায় এমন কনফিডেন্টলি ফাউল একটা অ্যাসেসমেন্ট করতে পারে, তার ক্লাস করার তো প্রশ্নই আসে না, সে উনি যত ভাল ক্লাসই নিন না কেন! আমি কিছু পারি না, এটা তো আমি জানিই! এজন্যই তো কোচিংয়ে আসা। পারলে কি আসতাম নাকি? আমি একটা গাধা, এটা শোনার জন্য এত কষ্ট করে, সময় নষ্ট করে, গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাসা থেকে কোচিংয়ে এসেছি নাকি? এটা শুনতে তো আর এতদূর আসতে হয় না।
বাসায় বসে থাকলে মা দিনে অন্তত ১০বার একথা বলে! তখনই ঠিক করে ফেললাম, ব্যাটার ক্লাস আর কোনদিনও করব না। করিওনি।
পরে জানলাম, উনি অংক-ইংরেজি-বাংলা-বিজ্ঞানে অতিদুর্বল সাধারণ জ্ঞানে মহাপণ্ডিত ৫বার বিসিএস’য়ে ব্যর্থ একজন বিশিষ্ট বিসিএস বিশেষজ্ঞ। শুধু নিজেরটা ছাড়া পৃথিবীর সকল মানুষের ব্যর্থতার কারণগুলি তিনি খুঁজে দিতে পারেন। উনি জানতেন, সুশান্ত সাধারণ জ্ঞানের কিছুই পারে না। কিন্তু উনি এটা জানতেন না, সুশান্ত বাংলা-ইংরেজি-অংক-বিজ্ঞান ওসব বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স করা যেকোনো স্টুডেন্টের চাইতে ভাল না পারলেও কোন অংশেই কম পারে না। উনি এটাও জানতেন না, শুধু সাধারণ জ্ঞানে তোতাপাখি হয়ে বিভিন্ন খাঁচায় বসে বসে মনভোলানো নানা ঢঙে ডাক দেয়া যায়, কিছু হাততালিও জুটে যায়, কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। ক্লিনটনের ওয়াইফের বান্ধবীর পোষা কুকুরের নামও আপনার মুখস্থ, কিন্তু আমার নানার একটা কালো কুকুর ছিল’কে ইংলিশে লিখেন, My grandfather was a black dog……… কোনো কাজ হবে না। সত্যি বলছি, কোনো কাজই হবে না।
কোচিংয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর প্রথম মডেল টেস্টে পেলাম ১০০’র মধ্যে ১৭! বলাই বাহুল্য, আমার মার্কসটাই ছিল সর্বনিম্ন। সেকেন্ড লোয়েস্ট মার্কসটা ছিল ৩৮; আমার প্রাপ্ত মার্কসের দ্বিগুণের চেয়েও ৪ বেশি! বুঝুন আমার অবস্থাটা! বাকিরা আমার অনেকআগে শুরু করেছে, আমি তো বিসিএস কথা জীবনেও শুনি নাই, আমি তো মাত্র শুরু করলাম—-নিজেকে খুশি করার জন্য এসব কথা ভাবতেই পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। ভাবলাম, ঠিক আছে, আমি না হয় কিছু পারি না, সেটা তো আর আমার দোষ না। কিন্তু আমি যদি সে দুর্বলতাকে জয় করার জন্য কিছু না করি, হাতপা গুটিয়ে বসে থাকি, সেটা তো নিশ্চয়ই আমার দোষ! প্রচণ্ড পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতে শুরু করলাম একেবারে জিরো থেকে। কে কী পারে সেটা ভেবে মন খারাপ না করে দুটো ব্যাপার মাথায় রেখে কাজ করতে লাগলাম। এক। সবাই যা পারে, সেটা পারাটা আদৌ কতটুকু দরকার। অন্ধের মত না পড়ে একটু বুঝেশুনে পড়তে শুরু করলাম। সবাই যা যা পড়ে, আমাকেও তা-ই তা-ই পড়তে হবে, এটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। দুই। সাধারণ জ্ঞানে ভাল কারোর সাথে নিজেকে তুলনা না করে নিজের সাথেই নিজেকে তুলনা করা শুরু করলাম। গতকালকের সুশান্তের চাইতে আজকের সুশান্ত কতটা বেশি কিংবা কম পারে, শুধু সেটা নিয়েই ভাবতাম। আমার কম্পিটিশন হতো আমার নিজের সাথেই। অন্যকাউকে না, ‘আজকের আমি’ ‘আগেরদিনের আমি’কে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কাজটা প্রতিদিনই করতাম। যারা ভাল পারে, তারা তো আর রাতারাতি এত ভাল পারে না। অনেক পরিশ্রম আর সাধনার পর এ দক্ষতা অর্জন করা যায়। যে স্টুডেন্টা অংকে ২০ পায়, সে যদি কখনো অংকে ২৪ পেয়ে যায়, তবে সে কিন্তু সাকসেসফুল। জানি, ৩৩ পেলে পাস, সে ফেল করেছে; তবুও আমি বলব, সে কিন্তু সফল। সে তো নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। এভাবে করে একদিন সে ১০০’তে ১০০-ই পাবে! এরজন্য ওকে বুঝেশুনে প্রচুর প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। মজার ব্যাপার হল, জেতাটা একটা অভ্যাস। যে একটা চাকরি পেয়ে যায়, সে চাকরি পেতেই থাকে। এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, হারাটাও কিন্তু একটা অভ্যাস। ভাল কথা, যারা কোচিং করছেন, কোচিংয়ে মার্কস কমটম পেলে মন খারাপ করবেন না। অনেকেই মেয়েদের কাছে হিরো হওয়ার জন্য আগে থেকে প্রশ্ন যোগাড় করে ‘পরীক্ষা’ দেয়। কোচিংয়ের প্রশ্ন যোগাড় করা তো কোন ব্যাপার না। এইরকম অনেক বান্দাকে আমি সেইরকমভাবে ধরা খেতে দেখেছি।
যে ছেলে কোনদিনও ঠিকভাবে বিসিএস’য়ের নামও শোনেনি, যে ছেলে জীবনেও কোন চাকরির পরীক্ষাই দেয়নি, সে ছেলে যদি বিসিএস পরীক্ষায় প্রথমবারেই ফার্স্ট হতে পারে, তবে আপনি কেন পারবেন না? ফার্স্ট হওয়াটা ভাগ্যে জুটুক আর না-ই বা জুটুক, মনপ্রাণ বাজি রেখে চেষ্টা করলে অন্তত চাকরিটা তো জুটবেই। ভাবছেন, খুব হেসেখেলে ফার্স্ট হয়ে গেছি? কিছুতেই না! এর জন্য অনেকরাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে। অনেক ছোট ছোট সুখকে গুডবাই বলে দিতে হয়েছে। মুখ বন্ধ রেখে মানুষের বড় বড় কথা হজম করে পড়াশোনা করতে হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, আপনারাও পারবেন। যারা চাকরি পায়, ওরা আপনাদের চাইতে কোনোভাবেই বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন নয়। নিজের উপর আস্থা রাখুন, নিজেকে সম্মান করুন, আপনার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করুন। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে!
(যারা ভাবেন, কিছুই পারেন না, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবেন কী করবেন না, এটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন এবং কোচিংকেই সবকিছু ভেবে বসে আছেন, তাদের জন্য)

গুড লাক!

সুশান্ত পাল
এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ

































Previous
Next Post »

Popular Posts